ইতালি থেকে অস্ত্রের চালান, দেশে আত্মগোপনে থাকা রাজিবকে খুঁজছে পুলিশ

আয়শা আক্তার , নগর প্রতিবেদক >>>
ইতালি থেকে বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গৃহস্থালি পণ্যের আড়ালে আসা অস্ত্রের চালান এবং প্রেরক রাজিব বড়ুয়াকে খুঁজছে পুলিশ।  বর্তমানে তিনি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেলেও অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি বলে পুলিশ দাবি করেছে।  তবে একাধিক অসমর্থিত সূত্র দাবি করেছে, রাজিব বড়ুয়া এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই রয়েছে।  তারা ব্যাপকভাবে রাজিবের কাছ থেকে তথ্য জানার চেষ্টা করছেন।  এর পেছনে রাজনৈতিক কিংবা অপরাধ জগতের কোনো যোগসূত্রতা আছে কি-না সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।  উপরের নির্দেশে এই বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করলেও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলছেন- পুলিশ প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করতে পারলেও প্রবাসী রাজীব বড়ুয়াকে ধরতে পারেনি।  তাকে খুঁজে পাওয়া গেলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর বের হবে।
জাহেদুল কবির জানান, গ্রেফতার মজুমদার কামরুল হাসান নানান তথ্য দিচ্ছেন আমাদের।  এ তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।  পাশাপাশি রাজীব বড়ুয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।  তিনি এখন দেশেই আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
গ্রেফতার মজুমদার কামরুল হাসান চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  তার কাছে আত্মগোপনে থাকা রাজিব বড়ুয়া কেন অস্ত্র পাঠিয়েছে সে বিষয়েও কিছু জানে না বলে কামরুল পুলিশকে জানাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতালি থেকে অস্ত্রের চালান পাঠানো রাজীব বড়ুয়া চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ ও বায়েজিদ এলাকায় যুবদল ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।  সেখানকার মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হতেন রাজিব।  তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।  সর্বশেষ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রাজিব বড়ুয়া ভারতে পালিয়ে যায়।  পরে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে স্থায়ী হন তিনি।  সম্প্রতি আগ্রাবাদ এলাকার এক অপরাধী চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ে।  পুলিশ জানায়, মজুমদার কামরুল হাসানকে বৈদেশিক ডাকে করে ইতালি থেকে আগেও একাধিক চালান পাঠিয়েছেন প্রবাসী রাজীব বড়ুয়া।  ওই চালানগুলোতে অস্ত্র ছিল কি না তা নিশ্চিত হতে না পারলেও ‘অস্বাভাবিক’ কিছু ছিল- এমনটাই ধারণা করছেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।  রাজীব বড়ুয়া ছিলেন একসময়ের যুবদল ক্যাডার।  তিনি কেন অত্যাধুনিক অস্ত্রের চালান এনেছেন, নেপথ্যে আর কে কে রয়েছেন- এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।  তাই তাকে গ্রেফতার করতে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইতালি থেকে তিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারি নাইন এমএম এবং এইট এমএম অস্ত্রের চালান পাঠালেও গত ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ তিনি ইতালি থেকে দেশে আসেন।   তার দেশে ফেরার পর তার নামে ওই চালানটি আসে এবং কাস্টমস অস্ত্রের চালান জব্দের পর গা ঢাকা দেয় রাজীব।
সিএমপির উপ-কমিশনার (বন্দর) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, কি কারণে অস্ত্র আনা হয়েছে তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।  আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে ইতালি প্রবাসী রাজীব বড়ুয়া বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন।  তাকে গ্রেফতার করা গেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।  তাই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, আগেও বৈদেশিক ডাকে করে ইতালি থেকে অভিন্ন কায়দায় ‘উপহার’ পাঠিয়েছেন রাজীব।  কামরুল হাসানের নামে পাঠানো ওই পার্সেল রাজীবের নির্দেশমতো বিভিন্নজনের কাছে পৌঁছে দিতেন কামরুল।  এমন সব কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় কামরুল।
উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক ডাকে করে গৃহস্থালি পণ্যের আড়ালে আসা একটি অস্ত্রের চালান জব্দ করে কাস্টমস।  ওই চালান থেকে একটি করে নাইন এমএম পিস্তল, এইট এমএম পিস্তল এবং দুটি খেলনা পিস্তল জব্দ করা হয়।  এ ঘটনায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নগরীর বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।  মামলায় ওই চালানের প্রাপক আগ্রাবাদ এলাকার কামরুল হাসান এবং প্রেরক ইতালি প্রবাসী রাজীব বড়ুয়াকে আসামি করা হয়।  পরে ওই চালানের প্রাপক চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অফিস সহকারী মজুমদার কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিসি/এসআইকে/এএ