হাটহাজারিতে দেখা মিলল বিপন্ন প্রজাতির শঙ্খিনী’র!

হাটহাজারী প্রতিনিধি >>>
শঙ্খিনী বা ভোতালেজ কেউটে বা ডোরা কাল কেউটে বা ডোরা শঙ্খিনী (ইংরেজি: Banded Krait) বৈজ্ঞানিক নাম- Bungarus fasciatus) হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভুক্ত এক প্রকার বিষধর সাপ।  এটি Bungarus গণের আওতাভুক্ত।  এই সাপের বিস্তৃতি দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়।  এটি কেউটে সাপের ভেতরে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং এটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হতে পারে ২.১ মি (৬ ফু ১১ ইঞ্চি)। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বিষধর এ সাপটিকে বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
গত বুধবার (২৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১৩ নম্বর দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মুসা খলিফার বাড়ির নূর হোসেনের বাড়িতে বিপন্ন প্রজাতির এমনই একটি সাপের দেখা মিলেছে।  ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফরহাদুর রহমান জানান, ওই দিন রাতে নূর হোসেনের বাসার আঙ্গিনায় কাজের বুয়া টর্চ লাইটের আলোয় সাপটিকে দেখে চিৎকার শুরু শুরু করেন।  কাজের বুয়ার চিৎকার শুনে এলাকার কয়েকজন যুবক এগিয়ে আসেন এবং সাপটিকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়।  তবে উপস্থিত এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা বাধা দিলে যুবকরা সাপটিকে মারা থেকে বিরত থাকে।  পরে সারা শরীরজুড়ে কালো ও হলুদ ডোরা চমৎকার রঙে সজ্জিত শঙ্খিনী সাপটি নিরাপদে ওই স্থান ত্যাগ করে।  সাপটি লম্বায় প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট দৈর্ঘ্যরে হতে পারে।
বাংলাদেশের পরিবেশ উপযোগী অন্যতম সুন্দর সাপ শঙ্খিনী পার্বত্য এলাকায় বেশি দেখা যায়- এমনটা জানিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, যে এলাকায় শঙ্খিনী থাকে অন্যান্য সাপ সাধারণত সেখানে থাকে না।  কারণ কেউটে, গোখরো, কালাচসহ অন্যান্য বিষাক্ত সাপ এদের প্রিয় খাদ্য।  তাই এদের ভয়ে অন্য সাপ পালিয়ে বেড়ায়।  নিশাচর শঙ্খিনী ইঁদুরের গর্ত, ইটের স্তুুপে কিংবা উইয়ের ঢিবিতে থাকতে পছন্দ করে।
তিনি আরও জানান, আইইউসিএন এর বিপন্নের তালিকায় থাকা শঙ্খিনী সাপ প্রাকৃতিকভাবেই পরিবেশে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রাখে।  তবে অন্যান্য সাপের মতো এই সাপও কমছে মূলত দু’টি কারণে।  মানুষ নির্বিচারে সাপ হত্যা করছে।  অন্য কারণ হচ্ছে মানুষের কারণে সাপের বাসস্থান বিপন্ন হচ্ছে দ্রুত।  তাই সাধারণ মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন করতে পারলে এখনও এই বিপন্ন প্রজাতির সাপকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।  তা না হলে অচিরেই এরা হারিয়ে যাবে।
শঙখিনীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায় তাদের সুপরিচিত কালোর মধ্যে হলুদ ডোরা দিয়ে।  তবে হলুদের মধ্যে মাথা হতে লেজ পর্যন্ত সোজা কালো ডোরাও দেখে গেছে যদিও তা বিরল খুব।  শঙ্খিনী/ডোরা কালো কেউটে সাপের দৈর্ঘ্য ১৫০ সেমি, সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ২২৫ সেমি পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।  সাপটি বেশ বড় হলেও সাপটির লেজের অংশটি ছোট ও ভোতা। সদ্য প্রস্ফুটিত অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৪০ সেমি উল্লেখ করা হয়েছে। এই সাপটি সাধারনত মানুষ দেখলে পালানোর চেষ্টা করে।  মাথা ঝোপ বা মাটির মধ্যে লুকিয়ে রাখে।  তখন ভোতা লেজটিকে অনেকে মাথা ভেবে ভুল করে।
শঙ্খিনী মূলত শান্ত ও লাজুক স্বভাবের। সাধারণত মানুষ এড়িয়ে চলে।  এমনকি বিরক্ত করলে শরীর পেঁচিয়ে মাথা শরীরের নিচে লুকিয়ে রাখে।  বলা যায় মানুষের জন্য হুমকিস্বরুপ নয় মোটেও।  তবে শিকারে বেশ দ্রুত।  ডোরা কালো কেউটে সাপ সমতল ভূমির উন্মুক্ত স্থানে বাস করে।  তবে পাহাড়ি জলস্রোতেও এদের দেখা যায়।  এরা ধীর গতিসম্পন্ন এবং তীব্র বিষ ধারণ করে।  স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৪ থেকে ১৪টি ডিম দেয় এবং ডিমের পরিস্ফুটনকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে।  ডিমের পরিস্ফুটনের জন্য ৬১ দিন সময় লাগে।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে ডোরা কাল কেউটে সাপকে বাংলাদেশের আবাসিক সাপ হিসেবে ধরা হয়েছে।  এ প্রজাতির সাপ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ব্যাপক বিস্তৃত। এদের ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, লাওস, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই অংশে বেশি বিচরণ করতে দেখা যায়।
আইইউসিএন এটিকে বাংলাদেশে বিপন্ন এবং বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচনা করে।  বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

ডিসি/এসআইকে/এমএমইউএম